অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান বিএনপির

সারাদেশে গুম, খুন, ধর্ষণের মতো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সারাদেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে এ আহ্বান জানান দলটির নেতারা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন উপলক্ষে সকাল থেকেই প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ধর্ষণ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান।

বিক্ষোভ সমবেশ ও মমানববন্ধনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকারের আমলেই সারাদেশে গুম, খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। শুধু প্রেসক্লাবের সামনে বক্তব্যের মধ্যেই আমাদের সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে।

তিনি বলেন, এই দেশে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চরম অবনতি হয়েছে শুধু তাই নয়, অর্থনীতি আজ ধ্বংসের মুখে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। এই দেশের সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন আমাদের মা-বোনেরা। তারা প্রতিটা মুহূর্তে নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এই যে দেশে আজকে ভয়াবহ করোনা মহামারী চলছে এটা এই স্বৈরাচারী সরকারের উদাসীনতার কারণে এই মহামারী ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তারা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে চায় না। আমরা বারবার সরকারকে বলেছি কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। আজকে এই অবস্থা হচ্ছে কেন? কারণ এই সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়। আজকে আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আইনের শাসনে বিশ্বাস করি আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সারাটাজীবন দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি খুব অসুস্থ। কিন্তু তার যে প্রাপ্য সেটা তাকে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। তাকে অন্যায় ভাবে দেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি দ্বিধাহীনভাবে বলতে চাই, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সকল ধরনের বৈধতা এবং অধিকার হারিয়েছে। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন রকমের কোন ধরনের কারণ নেই।

ফখরুল আরও বলেন, গত কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সারাদেশে যে ধর্ষণ হচ্ছে আমরা এর দায় এড়াতে পারি না। তার মানে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, সারাদেশে যে ধর্ষণ, লুণ্ঠন নির্যাতন-নিপীড়ন হচ্ছে এতে তাদের মদদ রয়েছে। এরজন্য তারাই দায়ী। আমরা আজকে এই সমাবেশ থেকে আপনাদের (সরকার) আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিন। যদি না যান এ দেশের জনগণ আপনাদের চলে যেতে বাধ্য করবে। আমাদের চুপ থাকার সময় নেই। দল-মত নির্বিশেষে এই অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরের বিএনপির উদ্যোগে ধর্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সারাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে এর ধিক্কার ও নিন্দা জানানোর মত ভাষা আমার নাই। আমাদের দেশে এমন একটা পরিস্থিতি হবে আমরা ইতিপূর্বে কখনো ভাবিনি। সারাদেশের ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সরকারদলীয় লোকেরা। তার পরেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা কিভাবে পার পেয়ে পাচ্ছেন? শুধু ধর্ষণ নয়, যত ধরনের পাপাচার অন্যায় অবিচার হওয়া দরকার এখন সমাজের সর্বস্তরে হচ্ছে। চারদিকে শুধু সমাজের অবক্ষয়। রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে ফেলেছে এই অবৈধ সরকার। তাই দেশকে বাঁচাতে হলে, এদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অন্যায় অবিচার মোকাবেলা করে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ঢাকা-৫ উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদল সাধারন সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল প্রমূখ।

আপনার মতামত দিন

আরো পড়ুন