জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জিয়া-খালেদা জিয়া সম্পর্কে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন শেখ হাসিনা : বিএনপি

জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।

আজ শনিবার সাড়ে এগারটার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।

শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানােেত এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,  ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে সরাতেই সরকার জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জিয়াউর রহমানের দাফন হয়েছে, লক্ষ লক্ষ লোক জানাজায় শরিক হয়েছে। তৎকালীন সেনা প্রধান এরশাদ (এইচ এম এরশাদ) সাহেব নিজে তার (প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান) বডি ক্যারি করেছেন। ইট ইজ এ ওপেন ক্লিয়ার, ক্লিষ্টাল ক্লিয়ার-এর চেয়ে বড় সত্য কিছু আর হতে পারে না। সেখানে এই ধরনের ইস্যুগুলো নিয়ে আসা তারা যে কতটা রাজনীতি শূন্য হয়ে গেছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে রাজনীতিতে-এটা তার প্রমাণ। আজকে আপনাদেরকে দিয়ে আমাদের কাছে প্রশ্ন করিয়ে সেই কথাগুলোকে আবার সামনে নিয়ে আসা এটা হচ্ছে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।

প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, মূল জায়গায়টায় আসে না কেনো তারা? যে নির্বাচনটা কিভাবে করবেন, আপনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে শক্তিশালী করবেন, কিভাবে মানুষের অধিকাগুলো, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবেন- সেই কথাগুলোর তারা (সরকার) উত্তর দেয় না। গতকাল আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল ওবায়দুর কাদের সাহেব বলেছেন, আমি নাকি তার কথার উত্তর দেই না। উনি কী পত্রিকা পড়েন? তার প্রত্যেকটা কথা উত্তর শুধু না, আমরা সঠিক সত্যকে তুলে ধরি সবসময়। উনি গতকাল বলেছেন, ছবি দেখাতে। কী বলব বলেন এখন? এসব কথার জবাব দিতে গেলে মানহানি মামলা করবেন। সেই ধরনের কথা আমাদের রুচিতে বাধে যে ছবি দেখাতে বলেন, অমুক করতে বলেন। এটা তো কাজ না, পয়েন্ট না। কাম ডাউন। করোনাতে কি করেছেন সেটা বলেন, আপনি মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য কি করেছেন সেটা বলেন, দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য কি করেছেন সেটা বলেন, আজকে কেনো মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে সেই কথা বলেন। আরেকদিকে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি মানুষ ধনী থেকে ধনী হচ্ছে, বড় লোক থেকে বড় লোক হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার করছে। সমাজে এমন একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, অসামাজিক কার্যকলাপে ছেয়ে গেছে। কোনো কিছু কাজ করছে না এখানে। ইট ইজ গোয়িং টু দ্য ফেইল্ড স্টেট।

জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মাজার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ধর্মপ্রাণ মানুষের মনের ভেতরে আঘাত এসেছে যে, জিয়াউর রহমান সাহেবের মাজার সম্পর্কে যেসব কথা তারা বলেছে- এটা সাধারণ মানুষ কখনো ভালোভাবে নেয়নি। জিয়াউর রহমান তো এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আছেন, মনের মধ্যে আছেন। আপনারা যদি কখনো শবেবরাতের রাতে ওদিকে মাজারে (জিয়া উদ্যান) যান দেখবেন যে, সাধারণ মানুষরা এসে তার মাজার জিয়ারত করছে। অযথা ওনাকে (জিয়াউর রহমান) নিয়ে টানা, শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে টানা এগুলো আমরা করতে চাই না। ওনারা আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় নেতা। তাদের সেই জায়গাতেই রাখা উচিত। এটা জাতির জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই দুঃখজনক যে, এদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যাদের অবদান আছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা তাদের সম্পর্কে এই সমস্ত নোংরা কথা যখন বলা হয় তখন  বোঝা যায় তারা কতটা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, তাদের কোনো রাজনীতি নেই।

বৃহস্পতিবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জিয়াউর রহমানের মাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে ‘রুচিহীন’ মিথ্যাচার অভিহিত করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কখন কী দেন, কিভাবে দেন, কেনো দেন-এটা এখন পর্যন্ত ঠিক আমাদের কাছে বোধগম্য হয়নি। গতকালকে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন- এটা কোনো রুচিবান মানুষ করতে পারে না বলে আমি মনে করি। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে যে, রুচিহীন, কদর্য একটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ এ ধরনের বক্তব্য মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তো।

সভায়  নিম্ন  বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় :

১। সভায় বিগত ২১ আগস্ট অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।

২। সভায় সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সভায় স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ, তাঁর মাজার সম্পর্কে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নিম্নমানের মিথ্যাচার জাতিকে বিভ্রান্ত করবার এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবার অপচেষ্টা বলে মনে করা হয়। সভায় এ ধরনের নিকৃষ্ট মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবার আহবান জানানো হয়।

৩। সভায় ইউনিসেফের গত মঙ্গলবার ২৪ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোভিড-১৯-এর কারণে সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে অবস্থানের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। দীর্ঘ কাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিপূর্বেও বিএনপি স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের টিকা প্রদান করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

৪। সভায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের ৪র্থ বছর অতিক্রম করার পরও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের কোনও ব্যবস্থা করতে না পারায় সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করা হয়। সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবসনে কোনো কার্যকর ক‚টনৈতিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বাংলাদেশের পক্ষে আনা সম্ভব হয়নি। চীনের মধ্যস্থতা ব্যর্থ হয়েছে। ভারত এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারেনি। জাতিসংঘের কোনও ফলপ্রসূ উদ্যাগ গ্রহণ করানোর ক্ষেত্রেও সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে একথা মনে করা অসংগত হবে না যে, সরকার নিজেরাই এই সমস্যার সমাধান করতে চায় না। গতকাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা সমস্যাকে অগ্রাধিকারের পর্যায়ে আনতে সরকার পারেনি। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকার ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ে ক‚টনৈতিক সাফল্যের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছিলো। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।

৫। সভায় স¤প্রতি আফগানিস্তানের কাবুল বিমান বন্দরে ওঝওখ-ক সন্ত্রাসীদের বোমা বিষ্ফোরণে প্রায় ২০০ জন বেসামরিক আফগান নাগরিক ও ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হবার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সমগ্র বিশ^ যখন আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রত্যাশায় তখন এই ধরনের বোমা বিষ্ফোরণ আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। বিএনপি সব সময়ই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরোধী রাজনৈতিক দল। সভায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদানা জানানো হয়।

৬. সভায় করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। টিকার কোনো পর্যাপ্ত মজুদ না রেখেই টিকা কর্মসূচি আবার শুরু করা সরকারের আর একটি ভুল সিদ্ধান্ত। বিএনপি বারবার টিকা সংগ্রহের বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধ্যন্য দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। অথচ সরকার জনগণকে প্রতারণা ও মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।

জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকার প্রমাণ দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমান লাশ নেই- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের নানা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার রাতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব নিজে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে প্রমাণ তুলে ধরেন। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘২৮ আগস্ট ১৯৭১ : জিয়াউর রহমান কর্তৃক রৌমারীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিষয়বস্তুর ওপর তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন দলের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান।

মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লাশ সম্পর্কে, তাঁর বডি এখানে এসেছে কিনা সে সম্পর্কে যে কথাগুলো এখন তারা বলেছে। আমি শুধু আজকে তার একটা প্রমাণ তুলে ধরতে চাই যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সেই চট্টগ্রাম থেকে তাঁর দেহ তোলা হয় তারপরে তার পোস্টমর্টেম করা হয়। ডা. তোফায়েল আহমেদ সাহেব তার পোস্টমর্টেম করেছিলেন এবং ২২টি বুলেট তাঁর শরীর থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন। তারপরে ব্রিগেডিয়ার আসম হান্নান শাহ (প্রয়াত) তাঁর লাশকে সামরিক এয়ার ক্রাফটে করে কুর্মিটোলায় নিয়ে এসেছিলেন যেটা আমরা সবাই স্বচক্ষে দেখেছি। আমার মনে হয় তখন ড. মোশাররফ হোসেন সাহেব উপস্থিত ছিলেন। আমি এসএ বারী এটি (উপ-প্রধানমন্ত্রী) সাহেবের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা সেখানে দেখেছি- একটা কাঁচের বাসকেট ছিলো সেখান থেকে আমরা তাঁর দেহ দেখেছি। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই ধরনের কথাবার্তা বলার একটাই মাত্র উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে যে, ইতিহাসকে বিকৃত করে দেয়া, জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশকে এই যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া। আমাকে একজন সাংবাদিক বলেছেন, ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ছবি দেখাতে বলেছেন। ছবি কেউ কোনদিন দেখায় না। ওনাদের ছবিটাও কী ওনারা দেখাতে পারবেন? এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যে, তারা ভিন্ন দিকে নিতে চায়, ভিন্নভাবে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়। সত্যি কথা বলতে কি, এই সরকার একটা ভন্ড সরকারে পরিণত হয়েছে, হিপোক্রেট সরকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

তিনি বলেন,  আওয়ামী লীগের এখন কোনো রাজনীতি নাই। তারা অন্তঃসার শূন্য একটা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তারা জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই, তারা করোনা সমস্যার সমাধান করতে পারে নাই, আজকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তারা করতে পারে নাই। আজকে আমাদের শিশুদের লেখাপড়া প্রায় ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। অর্থনীতি একেবারে রসাতলে যাচ্ছে। আজকে কোনো রকমের রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তারা কোনো কাজই করতে পারেনি। আমাদের সব অর্জনগুলো তারা ধ্বংস করে নিয়ে গেছে, হরণ করে নিয়ে গেছে। সেজন্য তারা মিথ্যাচার করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়। এই অবস্থা উত্তরণে সকলকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার যতদিন থাকবে, আরো বেশি দিন যদি থাকে বাংলাদেশ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেজন্য আমাদের বড় প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে জনঐক্য সৃষ্টি করা। ১৯৭১ সালে যেমন জিয়াউর রহমান জনযুদ্ধ শুরু করেছিলেন সেই রকম জনযুদ্ধের জন্য আমাদেরকে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন,  রৌমারী মুক্তিযুদ্ধের একটি গৌরবময় ইতিহাস, আমাদের গর্বের স্থান। জেড ফোর্সের অধীনে এই অঞ্চলটি ছিলো স্বাধীন দেশের মুক্তাঞ্চল। ২৮ আগস্ট আমাদের জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান সেখানে বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন করেন। ওই সময় রৌমারীর জনগণ ট্যাক্স দেয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো। তারা জানে যে, তাদের ট্যাক্সের টাকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রচেষ্টা আরো জোরদার হবে। জিয়াউর রহমান কেবলমাত্র একজন সমর নায়কই ছিলেন না। কিভাবে বেসামরিক প্রশাসন চালাতে হবে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি রৌমারীতে। আজকে ইতিহাসের এমনই বিকৃতি ঘটেছে যে, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কিনা এটাও আমাদের বক্তৃতা দিয়ে বলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশিদের বক্তব্য কিংবা ইতিহাসের যে নির্মোহ সত্য এগুলোকে ভুলিয়ে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা, জেড ফোর্সের বীরত্ব গাঁথা, রৌমারীর সেই মুক্তাঞ্চলের আকাশ-বাতাস, বৃক্ষ-লতা সব কিছুই সাক্ষ্য দেবে যে, জিয়াউর রহমান মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এই অবৈধ সরকার, অনির্বাচিত সরকারের কথায় দেশবাসী মোটেও আলোড়িত হবে না। মিথ্যা আর কতদিন টিকবে এখানে?
তিনি বলেন, আজকে আমরা একটি অবরুদ্ধ দেশে বসবাস করছি। আজকে প্রয়োজন সেই গামছা পরা, গেঞ্জি গায়ে দেয়া গ্রামীণ মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদেরকে এসে শহর দখল করতে হবে, তাদেরকে দেশবাসীর সামনে পরিচয় দিতে হবে কারা মুক্তিযুদ্ধে করেছিল এই দেশে আর কারা বিদেশে গিয়ে আরামে ছিলো। এদেশ কোনো বক্তৃতায় স্বাধীন হয় নাই। বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছি আমরা। জেড ফোর্সের একজন সৈনিক হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত। স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচাইতে ভয়াবহ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে জেড ফোর্স, আমাদের যেমন খেতাবধারীর সংখ্যা সর্বাধিক তেমনি শহীদের সংখ্যাও আমাদের সর্বাধিক। আজকে ইতিহাসকে বিকৃত করে সেই গৌরবের কথা জনগণের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না।

জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও  চিলমারী উপজেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার বক্তব্য রাখেন।

অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবি সারা বাংলাদেশের সকল অভিভাবকের। কিন্তু যারা আজকে এই দায়িত্বে রয়েছেন তারা চান না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হোক। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে নাকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে একটি মহল। খুব ভালো কথা, বিশৃঙ্খলা হোক আমরাও চাই না। কিন্তু শৃঙ্খলাটা রেখেছেন কোথায় আপনারা? আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আপনাদের সৈনিকেরা, আপনাদের অনুসারীরা, আপনাদের শিক্ষক পরিমল তার ছাত্রীকে আজ থেকে ১২ বছর আগে উলঙ্গ করে যে ভিডিও ছেড়েছিল, আজ পর্যন্ত সে অপরাধের বিচার করেছেন? এই ভিকারুননিসার বর্তমান প্রিন্সিপাল যে ধরনের কথা বলেছেন এর চেয়ে বড় কুশিক্ষা কি আরও আছে? ১৯৭২ সালে আপনারা অটোপ্রমোশন দিয়েছেন এবারও দিয়েছেন। আপনাদের সরকার অটোপ্রমোশনের সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি বলেছেন, আপনার মায়ের হাতে যারা ভাত খেয়েছে তারা আপনার পিতা হত্যার সাথে জড়িত। সেই অশিক্ষিত, মুনাফিক দলের নেত্রী আপনি। কুশিক্ষা আছে বলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেন না। আপনি জানেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট বিরোধী প্রতিবাদে আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নামলে আপনার সিংহাসন তলিয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে আবরার হত্যার পক্ষপাতিত্ব হলে শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়াবে এই ভয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেন না এই ভয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা মাদক ব্যবসাসহ কুকীর্তি করে তারা যাতে না করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেন না এই ভয়ে আপনার নিয়োগকৃত ভাইস চ্যান্সেলররা ও ছাত্রলীগের নেতারা টেন্ডার ভাগাভাগি করতে পারবে না বলে। আমরা বুঝি, আর এই জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখে জাতিকে অশিক্ষিত করে অন্ধকারের রাখছেন।

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে কুশিক্ষা হয়তো কিছুটা দূর হবে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) নিশ্চিত থাকেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে অভিভাবকরা খুশি হবেন। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী খুশি হবে। যত দেরিতে খুলবেন জনগণ বিক্ষুব্ধ হবে। আর এক সময় বেনজির, ডিসি হারুনও কোনো কাজে আসবে না। এক সময় কোনো বাহিনী কাজে আসবে না। বাংলাদেশের মানুষই বড় বাহিনী।

আরো পড়ুন