মামলা-গ্রেপ্তারেও আন্দোলনে গতি বাড়াবে বিএনপি

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িয়ে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ ধরনের নানা ইস্যু সৃষ্টি করা হলেও সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন থেকে সরবে না দলটি। যতই চাপে রাখা হোক, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং হামলা-মামলা যা-ই হোক আন্দোলনের গতি আরও বাড়ানো হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি দলের এক বৈঠকে সর্বধর্মীয়, সর্বদলীয় ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব তোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের নেতারা মনে করেন, একপক্ষীয় কমিটি হলে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটন হবে না। কারণ দলের কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর মতো সিনিয়র নেতাদের জড়ানোর মাধ্যমে এটি পরিষ্কার- সরকার পুরো ঘটনাটি বিএনপির ওপর চাপাতে চাইছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব হামলার ঘটনার পর করণীয় নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠকে দলের নেতাদের পর্যালোচনা হচ্ছে, সরকার পতনের দাবি থেকে বিএনপিকে সরাতে আরও

কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে। এটি মাথায় নিয়েই দল এগোবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথের এক দফার আন্দোলনকে কীভাবে জোরদার করা যায় তা নিয়ে কাজ করবেন তারা।

এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের সিরিজ বৈঠকে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের দেওয়া মতামতের একটি সারমর্ম তৈরি করতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তিনি তা উপস্থাপন করবেন। এরপর খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০-এর আলোকে ‘সফল আন্দোলন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পদ্ধতি ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার’ একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে দেশের মানুষ অনেক বেশি কষ্ট পাবে। আমরা আরও বেশি নিচের দিকে নামতে থাকব। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই সরকারকে সরাতে হবে। এজন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, সাদা-কালো, বাম-ডান সবাইকে এক হয়ে এদের সরাতে হবে।

বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর চৌমুহনীতে হামলার ঘটনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানেও বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের আসামি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোথায় কাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তার খোঁজ রাখছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর।

ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু আমাদের সময়কে বলেন, যারা সেদিন হিন্দু ভাইদের রক্ষা করেছে, সেসব নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা যাকে ধরতে বলছে তাকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করছে। অথচ ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করলে অথবা হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের সঙ্গে কথা বললেই প্রকৃত আসামি পাওয়া যেত।

গতকাল এক বিবৃতি মির্জা ফখরুল বলেন, এখন উদোর পিণ্ডিবুধোর ঘাড়ের চাপাতে দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িত করতে সরকার চক্রান্তমূলক নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার করছে। বিবৃতিতে তিনি নোয়াখালীতে অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে ‘মিথ্যা’ মামলা ও ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান।

আরো পড়ুন