“Wanted”: ছবিতে সেনাপ্রধানের পলাতক ভাইদের অবাধ বিচরণের দৃশ্য

আল জাজিরার তথ্যচিত্রে যা দেখান হয়েছে, তার মূল নির্যাস অনেকটাই পাওয়া যায় উপরের ছবি তিনটি থেকে।

বায়ের ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটের একটি পেইজ, যেখানে পলাতক আসামিদের তালিকা দেয়া আছে (গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারির স্ক্রিনশট)। এই তালিকায় গতকাল পর্যন্ত হারিস আহমেদের নাম ও ছবি ছিল। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই হারিস ১৯৯৬ সালের একটি খুনের ঘটনায় ২০০৪ সালে দণ্ডিত হন। এরপর থেকেই তিনি পলাতক। অন্তত ২০১১ থেকে ওয়েব সাইটের এই পেজে তাঁর নাম রয়েছে।

গতকাল নেত্র নিউজ বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েব সাইট থেকে পলাতক আসামীর তালিকা সম্বলিত ওয়েবপেইজের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে এই নিবন্ধের ইংরেজি সংস্করণে। সে তালিকায় ছিল হারিস আহমেদের নাম ও ছবি। এর পরই পুলিশের ওয়েব সাইট থেকে ছবিটি নামিয়ে নেয়া হয়!

ডানে উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে জেনারেল আজিজ আহমেদকে। তাঁর চারপাশে যাদেরকে দেখা যাচ্ছে, তাদের একজন হলেন হারিস আহমেদ (আজিজের ডানে, চোখে চশমা এবং পরনে আকাশি নীল গেঞ্জি), পুলিশের ওয়েব সাইটে নাম থাকা তালিকাভুক্ত পলাতক আসামি। এই ছবিটি তোলা হয়েছিল গত ১৭ জানুয়ারি, ২০২১-এ। গণমাধ্যমের কাছে বিলি করেছে খোদ আইএসপিআর। ছবির উপলক্ষ ছিল আজিজের গ্রামের বাড়ির এলাকা চাঁদপুরে একটি নতুন হাসপাতালের উদ্বোধন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাছের চারা রোপণ করছিলেন জেনারেল আজিজ। আল জাজিরার তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারের দুই সপ্তাহ আগের ছবি এটি।

কথা হচ্ছে, এতজন সাংবাদিক এবং আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের মাঝে হারিসের এ রকম উপস্থিতিটা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয় হবার কথা। নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন এখানে আসে তা হলো, পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘ওয়ান্টেড’ বা পলাতক আসামি হবার পরও হারিসকে কেন ওই অনুষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করা হলো না? সেসময় তো তিনি পুলিশের নিজের প্রকাশ করা নোটিশে তালিকাভুক্ত পলাতক আসামী ছিলেন।

তৃতীয় ছবিটি আনিস আহমেদের, খুনের দায়ে দণ্ডিত সেনাপ্রধানের আরেক ভাই। তাঁকে দেখা যাচ্ছে, ছেলে আসিফ আহমেদের সঙ্গে প্রকাশ্যে মোহাম্মদপুরের একটি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে। আসিফ তাঁর ফেইসবুক পেজে ২১ জুন, ২০২০-এ ছবিটি পোস্ট করেন। সঙ্গে ইংরেজিতে হ্যাশট্যাগ দেন ‘হ্যাপিফাদারসডে’। পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় না থাকলেও এই আনিসও খুনের দায়ে দণ্ডিত একজন পলাতক আসামি। তাঁর ছেলে আসিফ এর কিছুদিন আগেই ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আসিফের এই নির্বাচিত হওয়াটাও বেশকিছু নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়।

এ ছবিগুলো থেকে এটাই স্পষ্ট যে, এই পরিবারের লোকজন নিজেদেরকে পুলিশ বা আইন রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে মনে করেন। এ সব বিষয়ে নেত্র নিউজ আসিফ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কথা বলেননি।

পুনশ্চ

ডিডব্লিউতে গতকাল প্রচারিত সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, প্রশাসন এই দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেনি। কারণ তাঁরা জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে দেশে এসেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হারিস নকল পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করলেও আনিস নিজের নাম ব্যবহার করেই ভ্রমণ করে থাকেন। ছবিতে হারিসকে তাঁর ভাই জেনারেল আজিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, জেনারেল আজিজের পাশে দাঁড়ান লোকটির পরিচয় কী সেখানে উপস্থিত কেউ জানত না? আর তা কি সম্ভব?

আরো পড়ুন